সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

শাকিব খানের মায়ের প্রথম সাক্ষাৎকার: ছেলেকে নিয়ে কী বললেন তিনি?


 শাকিব খান—কেউ ভালোবেসে তাঁকে বলেন কিং খান, কেউ বলেন সুপারস্টার, আবার কেউ মেগাস্টার। বাংলাদেশের সিনেমায় তিনি এক উজ্জ্বল ও প্রভাবশালী নাম। কিন্তু তাঁর পরিবার, বিশেষ করে মা–বাবা ও ঘনিষ্ঠজনেরা সবসময়ই থেকেছেন আড়ালে। কখনোই সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি তাঁরা। তবে প্রথম আলোর আহ্বানে এই প্রথম মুখ খুললেন শাকিব খানের মা, রেজিয়া বেগম। ছেলেকে নিয়ে তাঁর অনুভূতি জানতে কথা বলেছেন মনজুর কাদের


সাংবাদিক: আপনার ছেলে শাকিব খান এখন দেশের অন্যতম সেরা নায়ক। জানতে চাই, ছোটবেলায় কোন কোন বিষয়ে তাঁর বেশি আগ্রহ ছিল?

রেজিয়া বেগম: আমার ছেলে পড়াশোনায় সবসময় ভালো ছিল। সে বিষয়ে ছিল খুব আগ্রহী ও মনোযোগী। বিশেষ করে গণিতে তার আলাদা ঝোঁক ছিল—এই বিষয়টায় ছোটবেলা থেকেই ভালো নম্বর পেত। পড়াশোনার ফাঁকে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গানবাজনায় অংশ নিত, নাটকও করত তারা দলবেঁধে। তবে এক কথায় বললে, পড়াশোনার দিক দিয়ে সে বরাবরই ছিল সিরিয়াস।


সাংবাদিক: আপনার ছেলের প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিনের কথা মনে আছে? তখন তাঁর অনুভূতি কেমন ছিল?

রেজিয়া বেগম: খুব ভালোভাবে মনে আছে। তখন আমরা ধানমন্ডি এলাকায় থাকতাম, ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের একটি স্কুলে ওর স্কুলজীবন শুরু হয়। প্রথম দিন স্কুলে যাওয়ার আনন্দে ও ছিল দারুণ উত্তেজিত। যেখানে সাধারণত ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে না চেয়ে কান্নাকাটি করে, সেখানে শাকিব ছিল একদম উল্টো। নিজে থেকেই উঠে রেডি হচ্ছিল, মুখে যেন হাসি থামছিল না। আগের রাতেই নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিল—সবকিছুই সে নিজে করেছে। দেখে মনে হয়েছিল, ওর জন্য স্কুলে যাওয়া যেন একটা উৎসবের মতো।


গুলশানের বাসায় মা রেজিয়া বেগম ও বাবা আবদুর রবের সঙ্গে শাকিব খান।

সাংবাদিক: ছোটবেলায় কোন কাজটা শাকিব খান সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন?

রেজিয়া বেগম: সবাই এখন তাঁকে নায়ক হিসেবেই চেনে, কিন্তু ছোটবেলায় খেলাধুলার প্রতি ছিল ভীষণ আগ্রহ। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলায় সব সময় মেতে থাকত। ঘুড়ি ওড়ানোও ছিল তার খুব প্রিয় একটা কাজ।

সাংবাদিক: ছোটবেলার শাকিব খান কেমন ছিল—শান্ত না দুষ্ট?

রেজিয়া বেগম: আমার মাসুদ ছিল একেবারে শান্তশিষ্ট। আমি যা বলতাম, তাই করত। যেখানে বসাতে বলতাম, সেখানেই শান্তভাবে বসে থাকত। কোনো রকম দুষ্টামি করত না। এক কথায় বলতে গেলে, একেবারে লক্ষ্মী ছেলে ছিল সে।

সাংবাদিক: একসময় স্কুল শেষে কলেজে ভর্তি হলো। তখন উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষে শাকিব যখন বলল, অভিনয় করবে—আপনার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

রেজিয়া বেগম: তখন মাসুদ কলেজে সদ্য ভর্তি হয়েছে। সামার ভ্যাকেশন চলছিল। একদিন হঠাৎ বলল, সে সিনেমায় অভিনয় করতে চায়। আমরা শুনেই অবাক! একেবারেই রাজি ছিলাম না। কারণ, একমাত্র ছেলে—তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ও ভালো পড়াশোনা করত, ইচ্ছা ছিল বিদেশে পাঠাব, ডাক্তারি পড়বে—এই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু কীভাবে যেন ধীরে ধীরে সিনেমায় যুক্ত হয়ে গেল। বলেছিল, শুধু তিন মাস চেষ্টা করে দেখবে, তারপর আর করবে না। আমরাও ভেবেছিলাম, ঠিক আছে—তিন মাসের জন্য। কিন্তু সেই তিন মাস এখন ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে! তবে যেহেতু ও অভিনয়ে আনন্দ পাচ্ছিল, আমরা আর বাধা দিইনি। ওর সুখেই আমরা সুখ খুঁজে নিয়েছি।

মা রেজিয়া বেগম ও বাবা আবদুর রবের সঙ্গে শাকিব খান।

সাংবাদিক: ক্যারিয়ারের শুরুতে তো শাকিব খান সেভাবে সফলতা পাচ্ছিল না। তখন ওর মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?

রেজিয়া বেগম: আমার ছেলে সব সময় যেকোনো কাজ মন দিয়ে, আন্তরিকভাবে করত। শুরু থেকেই খুব সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে অভিনয় করত। কিন্তু প্রথম কয়েক বছর সিনেমায় সেভাবে সফলতা পাচ্ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই একটু মন খারাপ থাকত। মাঝেমধ্যে খাবার টেবিলে এসব নিয়ে কথা হতো। নতুন কিছু করা যায় কি না, এমন কথাও উঠত। তবে মাসুদের আত্মবিশ্বাস ছিল দারুণ। ওর মনে বিশ্বাস ছিল, অভিনয়ে কিছু একটা ভালো করবেই। আর সেই বিশ্বাস থেকেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ৩–৪ বছরের মধ্যেই ওর সিনেমা সাফল্য পেতে শুরু করে। তখন ওর মুখে সিনেমার ব্যবসা নিয়ে আনন্দের গল্প শুনতাম। বুঝতাম, ওর পথটা ঠিকই ধরেছে। তখন ও নানা স্বপ্নের কথা বলত সিনেমা নিয়ে।

সাংবাদিক: কখন মনে হলো—‘হ্যাঁ, আমার ছেলে সত্যিই বড় কিছু হয়ে গেছে’?

রেজিয়া বেগম: সিনেমা তাকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিত করে তুলেছে। মানুষ ওকে ভালোবাসে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ায়। টেলিভিশন আর পত্রিকায় ওকে নিয়ে নানা ইতিবাচক খবর দেখি। আত্মীয়স্বজন গর্ব করে, দূরের মানুষও ওর প্রশংসা করে। এসব দেখে বুঝি, ও সত্যিই অনেক বড় কিছু হয়ে উঠেছে। কিন্তু মায়ের চোখে তো সে এখনও সেই আগের মাসুদই—আমার ছোট ছেলে।

মা রেজিয়া বেগমের সঙ্গে শাকিব খান (ডানে)।


সাংবাদিক: আপনার কাছে শাকিবের সবচেয়ে বড় গুণ কী? আর সবচেয়ে দুর্বল দিক কোনটি?

রেজিয়া বেগম: আমার ছেলেটা ভীষণ ভালো মনের মানুষ। কখনো কারো ক্ষতি চায় না। যতটুকু পারে, চুপিচুপি মানুষের উপকার করার চেষ্টা করে। ছোটবেলা থেকেই তার ভেতরে মানুষের প্রতি মায়া-মমতা, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা ছিল। এটিই তার সবচেয়ে বড় গুণ। তবে এটিই তার দুর্বলতাও—সে মানুষকে খুব সহজে বিশ্বাস করে। আর সেই বিশ্বাস থেকেই বহুবার ঠকেছে। জীবনের নানা সময়ে, পেশাগত ও ব্যক্তিগত জায়গায় অনেকেই ওর সেই বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। তবু সে কখনো এসব কষ্ট প্রকাশ করে না। খুব চাপা স্বভাবের—চুপচাপ সব সহ্য করে। নিজের কষ্ট নিজের ভেতরেই রাখে, কিন্তু পাশে থাকা মানুষগুলোর যেন কোনো অভাব না হয়, সেটাই ভাবে।

সাংবাদিক: তারকা হয়েও কি এখনো সে মায়ের কাছে আগের মতোই আদুরে?

রেজিয়া বেগম: হ্যাঁ, অবশ্যই। সবার চোখে সে হয়তো সুপারস্টার, কিং খান। কিন্তু আমার কাছে সে আজও আগের মতোই আদরের মাসুদ। মা হিসেবে সে জায়গা কখনো বদলায় না।


শাকিব খান
ছবি : শাকিব খানের ফেসবুক

সাংবাদিক: শাকিবের কোন কাজটা দেখে আপনি সবচেয়ে বেশি গর্ব অনুভব করেছিলেন?

রেজিয়া বেগম: ওর অনেক কাজই আমি দেখেছি, আর প্রতিটা কাজই যতটা সম্ভব দেখার চেষ্টা করি। এতগুলো সিনেমার মধ্যে বেশ কিছু কাজ আমাকে ভীষণ গর্বিত করেছে। প্রতিদিনের রান্নাবান্না আর ঘরের কাজ শেষ করে সময় পেলেই টেলিভিশনে ওর সিনেমা দেখি। বাসার সহকারীরাও আমার সঙ্গে মিলে একসঙ্গে বসে সিনেমা দেখে। আর নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পেলে মেয়ে, জামাই, মাসুদের বাবা—সবাই মিলে দল বেঁধে হলে গিয়ে দেখি। আগের সব ছবির মতোই সাম্প্রতিক ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘দরদ’, ‘তুফান’, ‘বরবাদ’—সব সিনেমাই দেখেছি। ছেলে যখন পর্দায় আসে, তখন মা হিসেবে গর্বে বুক ভরে যায়।

মা রেজিয়া বেগম ও বাবা আবদুর রবের সঙ্গে শাকিব খান।

সাংবাদিক: মায়ের হাতের রান্না করা কোন খাবারটা শাকিব সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে?

রেজিয়া বেগম: আসলে আমার রান্না করা সব কিছুই ওর ভালো লাগে। তবে খিচুড়ি, মোরগ পোলাও আর বিরিয়ানি ওর সবচেয়ে প্রিয়। মাছের নানা পদও খেতে ভালোবাসে। পরে যখন জিমে যাওয়া শুরু করল, তখন খাবারের অভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আসে। তবু ডায়েট ফুড হলেও, মায়ের হাতের রান্নাই তার সবচেয়ে পছন্দ।

সাংবাদিক: পরিবারে কতটা সময় দেয় শাকিব? আপনি মা হিসেবে সময় পান যথেষ্ট?

রেজিয়া বেগম: আমার ছেলে পুরোপুরি পরিবারকেন্দ্রিক। শুটিং না থাকলে সব সময় বাসাতেই থাকে। বাসার সবার সঙ্গে সময় কাটাতে ওর ভালো লাগে। বাইরে গিয়ে আড্ডা বা ঘোরাঘুরি একদমই করে না। কাজের ব্যস্ততার মাঝেও মা হিসেবে আমি যথেষ্ট সময় পাই। এখন যখন কাজ থাকে না, তখন পুরো সময়টাই দুই সন্তান—আব্রাহাম আর শেহজাদের সঙ্গে কাটায়।

শাকিব খান
ছবি: ফেসবুক

সাংবাদিক: শাকিবকে আপনি এমন কোনো পরামর্শ দিয়েছেন, যা সে সব সময় মনে রাখে?

রেজিয়া বেগম: হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকেই আমি একটা কথা বলতাম—সদা সঠিক পথে চলবে, মানুষের উপকারে আসবে, যতটা পারো সাহায্য করবে। আমি দেখেছি, সে এখনো সেই পরামর্শ মনে রেখে জীবন চালাচ্ছে।

সাংবাদিক: মা হিসেবে শাকিবের জন্য আপনার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন কী?

রেজিয়া বেগম: একজন মা হিসেবে সবসময় ওর মঙ্গলের জন্য দোয়া করি। ওর কিছু স্বপ্ন আছে—আমার একটাই চাওয়া, যেন সেগুলো পূরণ হয়। মা হিসেবে ওর প্রতিটি সাফল্যই আমার গর্ব।

সাংবাদিক: নায়ক নয়, ছেলে হিসেবে আপনার চোখে শাকিব কেমন?

রেজিয়া বেগম: আমার মাসুদ খুব ভালো মানুষ। ভীষণ নরম স্বভাবের, ভদ্র ও অমায়িক। তবে অন্যায়-অবিচার দেখলে চুপ থাকে না—তখন একটু রাগ করে ফেলে। এটা ওর পরিবার ও কাছের মানুষরা খুব ভালোভাবেই জানে।



Post a Comment

0 Comments